বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৫২ অপরাহ্ন
মু,,হেলাল আহম্মেদ(রিপন) পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি ঃ
দেড়শ বছরেও উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি অধিকাংশ এলাকায়ঃ বেশিরভাগ সড়কের বেহাল অবস্থাঃ জনদুর্ভোগ চরমে পটুয়াখালী শহরের ৯০ ভাগ রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ডুবে থাকা আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ পটুয়াখালীর মানুষ।
যানবাহন চলাচলে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ। সেলফি সড়ক আর দুটি লেকের উন্নয়ন ছাড়া অধিকাংশ এলাকায় উন্নয়নের ছিটেফোঁটাও পড়েনি। যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তার চেয়ে বশি লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে পৌর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ১৮৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পটুয়াখালী পৌরসভা।
এই পৌরসভার বর্তমান আয়তন ২৬বর্গ কিলোমিটার। প্রায় দেড়শ বছরের পুরানো এই পৌরসভায় ৬০৯ কিলোমিটারের মত সড়ক রয়েছে।
গত পাঁচ বছরে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরীর বাসা থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস পর্যন্ত ৮০০ মিটার ফুলের সড়ক, পলিটেকনিক এর সামনের লেক ও পৌরসভা ভবনের পিছনের লেক ছাড়া পটুয়াখালী পৌরসভার আর কোন সড়কের উন্নয়ন বা সংস্কার করা হয়নি। দীর্ঘ দিনে এসব সড়ক মেরামত না করায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
পৌরসভা এলাকার এক নম্বর দুই নাম্বার তিন নম্বর চার নম্বর পাঁচ নম্বর ছয় নম্বর আট নম্বর ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় সকল সড়কের এখন বেহাল অবস্থা। দীর্ঘ পাঁচ বছরে এসব সড়কের কোন উন্নয়ন হয়নি।
এতো বছর মেরামত না করায় যানবাহন চলাচল করতে করতে সড়কগুলোতে খানা খন্দলের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষার সময় সড়কগুলোর এসব খানা খন্দলে বড় বড় গর্তে পানি জমে থাকে। আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলাবালিতে একাকার হয়ে যায়। স্থানীয় যাদের সাথে আলাপ করলে তারা অনেকেই জানান পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহমেদ তার পাঁচ বছরের ক্ষমতা আমলে শহরের দুই তিনটি সড়ক ও লেগ নিয়ে পড়ে থাকলেও সার্বিকভাবে পটুয়াখালী পৌর এলাকার অন্যান্য এলাকায় রাস্তাঘাটে তেমন কোন উন্নয়ন কাজ করেননি।
দীর্ঘ দিনে খানাখন্দলে পরে থাকা ভাঙ্গাচুরা এই সড়ক এলাকার মানুষের দের এখন দুরাবস্হার শেষ নেই। সড়ক গুলোর আশপাশের বাসিন্দাদের বর্ষার সময় কাদা পানিতে একাকার অবস্থা হয় আর এই শুকনো মৌসুমে ধুলোবালিতে তাদের বসবাসে সীমাহীন দুর্ভোগ হচ্ছে। বাসা বাড়ির দরজায় জানালা বন্ধ রেখেও ধুলাবালির হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না তারা।
এই ধুলাবালির কারণে বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন এসব এলাকার শিশু নারী। দেখা দিচ্ছে শ্বাসকষ্ট সহ নানা রোগ ভোগ।পটুয়াখালী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডাক্তার শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, প্রথম শ্রেণীর এই পৌরসভার নাগরিকের অধিকার আছে সমান সুবিধা পাওয়ার কিন্তু গত পাঁচ বছরে শুষম উন্নয়ন না হওয়ায় পুরো এলাকার শতকরা আশি ভাগ রাস্তাঘাট উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের আওতায় আসেনি। যার জন্য পৌরসভার শতারা ৭০ শতাংশ মানুষ পৌর সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আজ তাদের চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী পাঁচ বছরে নব্বই কিলোমিটার রাস্তা উন্নয়নের কথা বললেও কোথয় কোথায়এসব রাস্তার উন্নয়ন হয়েছে তার নাম ঠিকানা বলতে পারেননি তিনি।
পুরান ফেরীঘাট থেকে লঞ্চঘাট পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রায় এই ৪ কিলোমিটার সড়কের এখন বেহাল অবস্থা। ৫ বছরে এই সড়কে ইট পাথর বালির একটি কনাও পরেনি বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। পটুয়াখালী পৌরসভার ১ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এখনো প্রায় ১০ কিলোমিটার রাস্তা কাচা রয়েছে। প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভায় দুই ওয়ার্ডের অনেক বাসিন্দাদের এখনো বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হচ্ছে।
অথচ শহরের প্রবেশ দ্বার সার্কিট হাউস থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ড পর্যন্ত ৮শ’ মিটার ৪লেন সড়ক ও ডিসি এসপি বাস ভবন এবং অফিস পাড়ার আশপাশের এলাকায় অর্ধশত কোটি টাকা ব্যয়ে ঝকঝকে তকতকে করে চোখ ধাধানো আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হলেও পৌর এলাকার ৮০ ভাগ এলাকায় কোন উন্নয়ন করা হয়নি। এ যেন আলোর নিচে অন্ধকার।
পটুয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আজিম উদ্দিন আরজু জানান, গত ৫ বছরে ৯০ কিলোমিটার রাস্তার উন্নয়ন দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। কিছু কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
বাকি কাজ আগামী ৩ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলেও তিনি জানান। আর্থিক সংকটের কথা উল্লেখ করে পৌর মেয়র মহিউদ্দিন আহম্মেদ জানান,৫ বছরে ১শ’ ৮০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করা হয়েছে। পৌরসভার সকল উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করতে হলে আড়াই থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে অনেক কাজ বাকি থাকাই স্বাভাবিক বলে জানান তিনি।